বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০১০

এক কাপ চা-এ আমি .........

চাচায় চা চায়, চাচি চেঁচায় চাচাদের চা চাওয়া নিয়ে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই চাচিরা তটস্থ। কিন্তু যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গাছের সবুজ পাতা থেকে পান যোগ্য চা তৈরী হচ্ছে তাদের খবর কি কোন চাচা বা চাচি রাখেন?

চা বাগানে যে সব শ্রমীকরা কাজ করেন তাদের সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। নিজ শ্রমীক ও বিঘা শ্রমিক। নিজ শ্রমিকরা সারা বছরেই কাজ করতে পারে কিন্তু বিঘা বা ঠিকা শ্রমিকরা বছরের কিছু নিদৃষ্ট সময়ে কাজ পায় অর্থা, যখন গাছে তোলার মতন পাতা থাকে। নিজ শ্রমিকরা তাদের স্ত্রী (যাদের আছে) ও সন্তানদের সংখ্যা অনুসারে স্বল্প মূল্যে কিছু চাল ও গম পান। যদি কেউ কোন দিন কাজে অনুপস্থিত থাকেন তবে তাকে fine দিয়ে রেশন তুলতে হবে। আর বিঘা বা ঠিকা শ্রমিকরা রেশন পান সপ্তাহের কাজের দিনের অনুসারে। আমি এতক্ষন যা বলেছি তা plantation Labour Act অনুসারে, কিন্তু বাস্তবে প্রায় বেশির ভাগ বাগানেই বছরে তিন থেকে চার সপ্তাহের রেশন বাকি রেখে দিচ্ছে। এই ভাবে বছরের পর বছর বাকি রেশনের সংখ্যা বাড়ছে।

Plantation Labour Act অনুসারে প্রত্যেক বাগানেই একটি হাসপাতাল থাকার কথা, আছেও তাই। কিন্তু চিকিত্‌সা ব্যবস্থা অতি নিম্ন মানের। ওষুধ প্রায় নেই বললেই চলে। আর থাকলেও সেই ওষুধে কোন কাজ হয় না। যেই রোগ নিয়েই রুগীরা আসুক না কেন প্রত্যেকে প্রায় একই ওষুধ দেওয়া হয়। আর ডাক্তার? একটা ছোট গল্প বললে বিষয় টা পরিস্কার হবে। আমার এক বন্ধু  পশু চিকিত্‌সার ওপর একটি short course  করে পশুপাখিদের ওষুধের দোকান খুলেছে এবং গ্রামে গঞ্জে পশু চিকিত্‌শা করে বেড়ায়। একদিন ও আমাকে বলল যে স্থানীয় এক চা বাগান ওকে ডাক্তার হিসাবে নিয়োগ করতে চায়। কিন্তু দেনা পাওনা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ও join করে নি। তালে বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি। অথচ এই সব ডাক্তারদের ওপর নির্ভর করে হাজার হাজার শ্রমিকদের বেঁচে থাকতে হয়।

যেহেতু চা বাগানের শ্রমিকদের প্রায় সকল কেই ভিন রাজ্য থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাই এদের সকলেরই বাসস্থানের ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করেছিল। সেগুলি এখন আর বাসের যোগ্য নেইবর্তমানে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থায় ‘ইন্দিরা আবাস যোজনায়’ কিছু ঘর তৈরী হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ও বাগান কর্তৃপক্ষ N.O.C. দিতে গরিমসি করে।

এবার আসি মজুরির কথায়। চা বাগানের শ্রমিকরা মজুরি পান দিনে ৬৭ টাকা। যারা camical spray করেন তারা পান ৭১ টাকা। আর যারা factory –তে কাজ করেন তারা মজুরি পান দিনে ৭১.৫০ টাকা। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নুন্যতম বেতন প্রতিদিন ১০০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে কোন আলোচনা হলেই বাগান মালিকদের সংগঠন বার বার বলে আসছে ‘বাগানে কোন লাভ হয় না, প্রায় সব বাগানই loss-এ চলছে

সত্যি কি তাই। এখন দেখা যাক এক কেজি চা বানাতে কত খরচ হয়। প্রায় ৫ কেজি কাঁচা পাতা থেকে তৈরি হয় এক কেজি চা। সমস্ত খরচ ধরে নিয়ে প্রতি কেজি চা বানাতে খরচ হয় ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা। অথচ খোলা বাজারে আমরা অতি সাধারন মানের চা নুন্যতম ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনি। তবে বাকি টাকা যায় কোথায়? এর সিংহ ভাগই যায় বাগান মালিকদের পকেটে। তাই বাগানের account –এ দেখা যায় loss.

এতো গেল শ্রমিকদের কথা। কর্মচারিদের অবস্থা আরো সঙ্গিন। যেহেতু তারা সঙ্খার অনুপাতে অতি নগন্য তাই এরা কোন আন্দলন ও করতে পারে না এবং মালিক পক্ষ সব সময় চায় শ্রমিক ও কর্মচারিদের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি করতে।

আমার বক্তব্য, যারা সুধিজন, যাদের সাহিত্যে, শিল্পে, কবিতায়, গানে ‘চা’ ওতপ্রত ভাবে জরিয়ে আছে। তারা এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ খুলুন। তাদের সাহিত্যে, শিল্পে, কবিতায়, গানের মাধ্যমে চা শিল্পের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। যে ভাবে অতিতে ‘নীল কর” দের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল তখনকার সুধিজনেরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Related Posts with Thumbnails
কপিরাইট © দেবাশিস গুহ, দেবপাড়া চা বাগান, বানারহাট, জলপাইগুড়ি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.