শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০১০

কৈফিয়ৎ


আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে “আপনি হাতি তথা বন্যপ্রাণী নিয়ে এত লেখা লেখেন আর  আপনার আবাসন থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে (মরাঘাটে) সাতটি হাতি ট্রেনে চাপা পরে মারা  গেল, যা হাতি তথা বন্যপ্রাণীদের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটে নাই। অথচ আপনি এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ।“  সত্যি আমার আবাসনের কাছেই এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেল অথচ আমি একবারের জন্যেও সেখানে গেলাম না। ইচ্ছা করেই যাই নাই। যেমন যাই নাই রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের ক্ষেত্রেও। কদিন আগেই সেখানেও ট্রেনে চাপা পড়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল।
 আমি খুব সকালেই খবরটা পেয়েছিলাম। তবে মৃত্যুর সংখ্যাটা সঠিক ছিল না। বলেছিল পাঁচ টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। খবরটা দিয়েছিল যারা, তারাই একসময় আমাকে বিদ্রুপ করতো। আমার অপরাধ, আমি এন.জে.পি থেকে আলিপুর দুয়ার পর্যন্ত রেলপথ মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজ-এ রুপান্তারের বিপক্ষে ছিলাম। প্রতিদিন হাতির অত্যাচারের শিকার হলেও তারাও কিন্তু এই মৃত্যু ভালো ভাবে নেয় নি। আমি যাই নাই কারন আমি এই নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী চাই নি, তাই টি.ভি. তেও এই দৃশ্য দেখি নি। দূর থেকে শিশু সহ সাতটি হাতির শুধু  আত্মার শান্তি কামনা করেছি।

আন্দোলনের পদ্ধতি বদল


মানুষ মানুষকে হাইজ্যাক করে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হাতীরাও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থেকে এটা আয়ত্ত করেছে। শুনতে অবাক লাগছে?  বাস্তবে এটাই ঘটে গেল মাদারিহাটের উত্তর খয়েরবাড়ি গ্রামে।
গত ২৬/১০/১০ মঙ্গলবার মাঝরাতে প্রায় ৪০ টি হাতির একটি দল এগিয়ে আসছিল উত্তর খয়েরবাড়ির মংরা খেড়িয়ার বাড়ির দিকে। হাতির আওয়াজ শুনে মংরা ও তার ছেলে মোহন চিৎকার শুরু করলে গ্রামবাসীরা পটকা ফাটাতে ফাটাতে এগিয়ে আসেন। এমন সময় ঘটনাস্থলে বনকর্মীরাও চলে আসায় হাতির দলটি জঙ্গলের দিকে ফিরে যায়। তারপর বনকর্মী ও গ্রামবাসীরা যখন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন, তখনই ঘটে গেল রোমাঞ্চকর ঘটনাটি।
হাতি দলের গোদাটি এই অপমান সহ্য করতে পারেনি। বড় এই দাঁতালটি হঠাৎ ফিরে এসে মোহনকে শুঁড়ে তুলে জঙ্গলের দিকে নিয়ে চলে যায়। মোহন ও তার বাবা মংরার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে গ্রামবাসীদের সাথে ছুটে আসেন বনকর্মীরাও। এসে দেখেন দাঁতালটি মোহনকে শুঁড়ে তুলে জঙ্গলের দিকে নিয়ে পালাচ্ছে। মাদারিহাটে এলিফ্যান্ট স্কোয়াড়ের বনকর্মীরা এরপর উপায়ন্তর না দেখে শুন্যে ৬ রাউণ্ড গুলি চালান। এতে দাঁতালটি মোহনকে তার বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে নিয়ে তিতি নদীর বাঁধের উপর শুইয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
মোহনকে ছেড়ে যাওয়ার সময় হাতিটির পেছনের পায়ের চাপায় মোহনের ডান পা ভেঙে যায়। আর শুঁড়ে তুলে নেওয়ার সময় দুটি দাঁতের চাপে ঘাড়, পিঠ ও বুকে আঘাত লাগে। পরে সে মারা যায়। আবার মোহনের মৃত্যুতে হাতিরা খুবই শোকাহত হয়ে পড়ে।
২৮ শে অক্টোবর সন্ধ্যায় বাড়ির সামনেই মোহনের শেষকৃত্য করা হয়। সে সময় হঠাৎ লক্ষ করা যায় যে দাঁতালের নেতৃত্বে একদল হাতি কিছুটা দূরে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। সারারাত হাতির দলটি মোহনের বাড়ির চারপাশ ঘিরে রাখলেও ভোরের আলো ফোটার আগেই জঙ্গলে চলে যায়।
পরের দিন অর্থাৎ শনিবার রাত ১২ টা নাগাদ ৫০ – ৬০ টি হাতির দল তার বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে। আবার সকাল ৮ টা নাগাদ দাঁতালের নেতৃত্বে দলটি ধীরে ধীরে জঙ্গলে চলে যায়। সকলেই নতমুখে ছিল। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা হল সারারাত  হাতিরা যে তার বাড়ির চারদিকে দাঁড়িয়ে ছিল তখন কোন ক্ষতি তো দূরের কথা টুঁ শব্দ পর্যন্ত করেনি।
বলতে বাধ্য হচ্ছি যে একের পর এক বন্য প্রানীর হত্যার ফলে এঁদেরও পিঠ আজ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাই নিরুপায় হয়ে এঁরা নেমে পরেছে আন্দোলনে। কখনো ট্রেন অবরোধ, কখনো রাস্তা অবরোধ আবার কখনো বা কিডন্যাপ-এ। আমাদের আরো দেখা বাকি আছে!

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১০

Durga Puja @ Banarhat, Jalpaiguri.

বানারহাট দুর্গা পুজা পরিক্রমার কিছু ছবি
দেবপাড়া চা বাগানের প্রতিমা

দেবপাড়া চা বাগানের মহা অষ্টমী

পূজা কচি কাঁচাদের

বানারহাটের আলোক সজ্জা

বানারহাট স্টেশন রোডের পূজা মণ্ডপ ও প্রতিমা


বানারহাট চামুর্চী মোড়ের পূজা মণ্ডপ ও প্রতিমা


বানারহাট কালীবাড়ি


বানারহাট শীতলা বাড়ির দুর্গা পূজা


বানারহাট সর্বজনীন দুর্গা পূজার মণ্ডপ ও প্রতিমা




বানারহাট মেলার কিছু ছবি


বিদায়ের আগে প্রতিমা বরণ ও সিঁদুর খেলা


এই সেই আংরাবাসা নদী, গয়েরকাটায় যেখানে প্রতিমা বিসর্জন হয়


গয়েরকাটায় প্রতিমার শোভাযাত্রা


 
 
 
 
 

 
ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের অপেক্ষায়


 
 

ঘাটে বিশেষ আকর্ষণ রঙ বেরঙের বেলুন


বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১০

এবার হাতির পথ অবরোধ

রেল লাইনের পর এবার রাজপথ। হাতিদের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত। মঙ্গলবার গুলমায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রেন আটকে দেবার পর বুধবার(১৮-০৮-১০) জাতীয় সড়কে (৩১ সি)দাঁড়িয়ে থেকে যানবহন আটকে দিল হাতি। এবারের ঘটনা ঘটেছে নাগরাকাটার উপকণ্ঠে খুনিয়া মোড়ের কাছে। সকাল সাড়ে নটা থেকে সারে দশটা পর্যন্ত পাক্কা এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক আটকে রাখে একটি পূর্নবয়স্ক মাকনা হাতি। হাতিদের এই একের পর এক অবরোধ হাতি হত্যার নিঃশব্দ প্রতিবাদ কিনা কে যানে!

উল্লেখ্য, ট্রেনের ধাক্কায় সম্প্রতি মূর্তি রেলসেতু সংলগ্ন এলাকা ও মহানন্দার জঙ্গলে দুটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর পরই শুরু হয় হাতিদের রেললাইন অবরোধের পালা। সপ্তাহখানেক আগে চাপড়ামারির জঙ্গল চেরা রেললাইনে একপাল হাতি আটকে দেয় আলিপুরদুয়ার জংশনগামী মহানন্দা এক্সপ্রেসকে। গত মঙ্গলবার গুল্মায় একটি দাঁতালের জন্য আটকা পড়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন। বুধবার খুনিয়ার ঘটনায় জাতীয় সড়কে কয়েকশো গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। 

বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০১০

বুনো হাতির ট্রেন অবরোধ!

“বিড়ল প্রজাতির বিড়াল উদ্ধার”, “স্কুল ঘর থেকে বিষাক্ত সাপ উদ্ধার”, “মিড-ডে মিলের চাল খেয়ে গেল দাঁতাল হাতি”, “রাজ পথে বাইসন”, “লোকালয়ে পাইথন”, “বিড়ল প্রজাতির প্যাঁচা উদ্ধার করল স্থানিয় বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যরা”
আজকাল খবরের কাগজ খুললে প্রায় রোজই চোখে পরে এই ধরনের কিছু সংবাদ।  কখনো ভেবে দেখেছেন কি কেন এই হাতিরা মিড-ডে মিলের চাল খেতে স্কুলে আসে। এরা নিশ্চয় ছাত্র নয়  বা বিষাক্ত সাপেরাও নিশ্চয় ক্লাস করতে স্কুলে আসে না। তবে এরা বন থেকে বেড়িয়ে এলো কেন?
আসলে বন্যরা এখন আর বনে সুন্দর নেই। বনকে এখন তারা আর নিরাপদ স্থান বলে মনে করতে পারছে না। দিন দিন বন কমে আসছে, খাবারের প্রচণ্ড অভাব। তার ওপর চোরাশিকারীর অত্যাচার। গোদের ওপর বিষফোরের মতন এখন আবার এক নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ট্রেনে কাটা পরে হামেশাই বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু হচ্ছে। সম্ভবত এইসব ঘটনার প্রতিবাদ করতেই মঙ্গলবার রেল অবরোধ করল একটি হাতি। উত্তরবঙ্গ সংবাদের খবরটি এই রকম।
ডুয়ার্সের মধ্য দিয়ে যাওয়া রুটে মঙ্গলবার দফায় দফায় একাধিক ট্রেন অবরুদ্ধ হয়ে রইল একটি হাতির জন্য।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্স হয়ে আলিপুরদুয়ার জংশনগামী রুটে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকের কাছে বহু দরবার করা হয়েছে রাজ্যের বনদপ্তরের তরফে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কমিটি একাধিক সুপারিশও করেছে। কিন্তু কোনোটাই কার্যকর করা হয়নি। ফলে ট্রেনে কাটা পড়ে হাতি সহ অন্য বন্যপ্রাণীর মৃত্যুকেও আটকানো যায়নি। মঙ্গলবার সম্ভবত সেইসব ঘটনার প্রতিবাদ জানাল একটি হাতি, রেল অবরোধ করে।
এদিন সকালে নিউ জলপাইগুড়িগামী সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসের চালক সেবক স্টেশন পেরিয়ে আসার পর গুলমার কাছাকাছি রেললাইনের উপর একটি হাতিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। দীর্ঘ হর্ণের আওয়াজ শুনে হাতিটি লাইন ছেড়ে পাশে সরে যায়। তবে তার আগে এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে। পরে হাতিটি লাইন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ট্রেনটি চলতে শুরু করলে হাতিটি ঘুরে দাঁড়িয়ে শুঁড় দিয়ে ইঞ্জিনে আঘাত করার চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশ খানিকটা পথ দৌঁড়ায় হাতিটি। এবং শুঁড় দিয়ে ঘনঘন ট্রেনের কামরায় আঘাত করার চেষ্টা করে।
এরপর দুপুরে এবং বিকালে একটি মালগাড়ি এবং এনজেপি-আলিপুরদুয়ার প্যাসেঞ্জারেরও পথ অবরোধ করে হাতিটি। কিছুক্ষন অবরোধের পর অবশ্য লাইন ছেড়ে সরে যায় সে।
তবে কি মানুষের বনধ, অবরোধ সংস্কৃতি ছড়াল বন্যপ্রানীদের মধ্যেও?

রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০১০

প্রসঙ্গঃ চা

আমার ব্লগে বার বার চা-র প্রসঙ্গ আসে শুধু ভোর হলেই চাতক পাখির মতো চায়ের পেয়ালার জন্য চেয়ে থাকি বলে নয়। আসলে আমি কর্মসূত্রে চা-এর সাথে জড়িত। তাই কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকে যায়। এই পানীয়টির জন্ম চীনে। ভারতবর্ষে চা গাছের গোড়াপত্তন ১৮২৩ সালে। নাম করতেই হবে রবার্ট ব্রুস, অসমের মণিরাম দেওয়ান এবং সেই সঙ্গে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের দ্বারকানাথ ঠাকুর মহাশয় এবং সিংফো জনজাতির প্রধানের ভূমিকা। অরুণাচল ও মায়ানমারের লাগোয়া পাটকই পাহাড়ের সানুদেশে জন্ম হল দুটি পাতা একটি কুঁড়ি। অতঃপর অন্তহীন গবেষণা। চা-পানের কত রসালো গল্প। আর চা নিয়ে মধুর চর্চা, গম্ভীর আলোচনা, পরামর্শদাতা অবশ্যই লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক। সময় ১৮৩৪। ১৮৩৭ সালে অসমে তৈরি চায়ের পেটি জাহাজে চাপিয়ে সমুদ্রযাত্রা ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ব্রিটিশরা চা-বাগান সৃষ্টি করলেও বঙ্গ সন্তানরা পিছিয়ে ছিলেন না। ডাঃ ক্যাম্পবেল ১৮৪০-এ দার্জিলিংয়ে চা চাষে বিপ্লব ঘটান। তরাইয়ের প্রথম চা-বাগান ১৮৬২-তে নিউ চামটা। সুকনা যেতে দেখা যায়। ডুয়ার্সের প্রথম চা-বাগান ১৮৭৮-এ গজলডোবা। ভারতের নানা প্রান্তে চা-বাগান থাকলেও স্বাদে-গন্ধে দার্জিলিং আজও সবার সেরা।
চীন ও জাপানে প্রসাধনসামগ্রী হিসাবে চায়ের পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। চায়ের পাতা ভিজিয়ে সেই নির্যাসে নিয়মিত মুখ ধুলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এক সময় ভারতে চায়ের নির্যাস দিয়ে চুলরং করার প্রদ্ধতি প্রচলিত ছিল। জাপানীরা ভিজে চা পাতা কাপড়ে বেঁধে চোখের উপর দিত যাতে চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। চায়ের নির্যাস কাপড়ে ভিজিয়ে কাঠের আসবাবপত্রে ঘষলে আসবাবপত্রে চাকচিক্য ফিরে আসে।

শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০১০

ইদানিং কালে আপনি শকুন দেখেছেন কি?

    আজকাল পরিবেশ বান্ধব 'শকুন' কে আর সেভাবে দেখতে পাওয়া যায়না। লুপ্ত প্রায় এই পাখিকে বাঁচাতে উদ্যোগী হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রক ও বন মন্ত্রক এগিয়ে এল এদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে।
    ডুয়ার্সের রাজাভাতখাওয়া জঙ্গলে শকুনের সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ১ কোটি টাকা খরচ করবে বন মন্ত্রক। এই অভয়ারণ্যে এখন তিন প্রজাতির শকুন আছে। এগুলি হল স্লেণ্ডারবিলড, এশিয়ান হোয়াইট ব্যাকড এবং লং বিলড প্রজাতির। বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি (BNHS)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বন দফতর ২০০৫-এ শকুন প্রজনন শুরু করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৮২ টি শকুনকে এনে এই অভয়ারণ্যে রাখা হয়েছে। দেশে শকুন সংরক্ষণের এই প্রচেষ্টা এর আগে হয়েছে হরিয়ানার পিঞ্জোরে। শকুনরা বছরে একবারই ডিম পারে। তাও আবার প্রতি বছর নয়। তাই এদের প্রজননের সু-বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজ্য বন দফতরের বরাদ্দ এই অর্থ খরচ করা হবে। একই সঙ্গে অসুস্থ শকুনদের আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে। বিরল হয়ে যাওয়া শকুনদের বাঁচাতে সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের পক্ষীপ্রেমী ও পরিবেশবিদরা।
(তথ্য সূত্রঃ উত্তরবঙ্গ সংবাদ)

বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০১০

বক্সায় এখন অনেক বাঘ

একটি সুখবর। জলপাইগুড়ি জেলার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ৩৩ টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা আর পি সাহানি জানিয়েছান। ২০০৭ সাল থেকে এই প্রকল্পের বাঘ গননা শুরু হয়। প্রথমে আশানুরূপ ফল পাওয়া না গেলেও এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাঘেদের থাবার চিহ্ন, মল ইত্যাদির নমুনা সংগ্রহ করে হায়দ্রাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যাণ্ড মলিকিউলার বায়োলজিতে পাঠানো হয়। সেখানে পাঠানো ৮৩ টি নমুনার মধ্যে ৫৫ টি নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায় মোট ৩৩ টি বাঘের অস্তিত্ব এখানে রয়েছে। তবে, পুরুষ ও স্ত্রী বাঘের সংখ্যা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। যদিও পরিবেশ প্রেমিদের একাংশ মনে করেন আদেও বক্সায় এত বাঘ নেই।

বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০১০

এক কাপ চা-এ আমি .........

চাচায় চা চায়, চাচি চেঁচায় চাচাদের চা চাওয়া নিয়ে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই চাচিরা তটস্থ। কিন্তু যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গাছের সবুজ পাতা থেকে পান যোগ্য চা তৈরী হচ্ছে তাদের খবর কি কোন চাচা বা চাচি রাখেন?

চা বাগানে যে সব শ্রমীকরা কাজ করেন তাদের সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। নিজ শ্রমীক ও বিঘা শ্রমিক। নিজ শ্রমিকরা সারা বছরেই কাজ করতে পারে কিন্তু বিঘা বা ঠিকা শ্রমিকরা বছরের কিছু নিদৃষ্ট সময়ে কাজ পায় অর্থা, যখন গাছে তোলার মতন পাতা থাকে। নিজ শ্রমিকরা তাদের স্ত্রী (যাদের আছে) ও সন্তানদের সংখ্যা অনুসারে স্বল্প মূল্যে কিছু চাল ও গম পান। যদি কেউ কোন দিন কাজে অনুপস্থিত থাকেন তবে তাকে fine দিয়ে রেশন তুলতে হবে। আর বিঘা বা ঠিকা শ্রমিকরা রেশন পান সপ্তাহের কাজের দিনের অনুসারে। আমি এতক্ষন যা বলেছি তা plantation Labour Act অনুসারে, কিন্তু বাস্তবে প্রায় বেশির ভাগ বাগানেই বছরে তিন থেকে চার সপ্তাহের রেশন বাকি রেখে দিচ্ছে। এই ভাবে বছরের পর বছর বাকি রেশনের সংখ্যা বাড়ছে।

Plantation Labour Act অনুসারে প্রত্যেক বাগানেই একটি হাসপাতাল থাকার কথা, আছেও তাই। কিন্তু চিকিত্‌সা ব্যবস্থা অতি নিম্ন মানের। ওষুধ প্রায় নেই বললেই চলে। আর থাকলেও সেই ওষুধে কোন কাজ হয় না। যেই রোগ নিয়েই রুগীরা আসুক না কেন প্রত্যেকে প্রায় একই ওষুধ দেওয়া হয়। আর ডাক্তার? একটা ছোট গল্প বললে বিষয় টা পরিস্কার হবে। আমার এক বন্ধু  পশু চিকিত্‌সার ওপর একটি short course  করে পশুপাখিদের ওষুধের দোকান খুলেছে এবং গ্রামে গঞ্জে পশু চিকিত্‌শা করে বেড়ায়। একদিন ও আমাকে বলল যে স্থানীয় এক চা বাগান ওকে ডাক্তার হিসাবে নিয়োগ করতে চায়। কিন্তু দেনা পাওনা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ও join করে নি। তালে বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি। অথচ এই সব ডাক্তারদের ওপর নির্ভর করে হাজার হাজার শ্রমিকদের বেঁচে থাকতে হয়।

যেহেতু চা বাগানের শ্রমিকদের প্রায় সকল কেই ভিন রাজ্য থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাই এদের সকলেরই বাসস্থানের ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করেছিল। সেগুলি এখন আর বাসের যোগ্য নেইবর্তমানে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থায় ‘ইন্দিরা আবাস যোজনায়’ কিছু ঘর তৈরী হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ও বাগান কর্তৃপক্ষ N.O.C. দিতে গরিমসি করে।

এবার আসি মজুরির কথায়। চা বাগানের শ্রমিকরা মজুরি পান দিনে ৬৭ টাকা। যারা camical spray করেন তারা পান ৭১ টাকা। আর যারা factory –তে কাজ করেন তারা মজুরি পান দিনে ৭১.৫০ টাকা। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নুন্যতম বেতন প্রতিদিন ১০০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে কোন আলোচনা হলেই বাগান মালিকদের সংগঠন বার বার বলে আসছে ‘বাগানে কোন লাভ হয় না, প্রায় সব বাগানই loss-এ চলছে

সত্যি কি তাই। এখন দেখা যাক এক কেজি চা বানাতে কত খরচ হয়। প্রায় ৫ কেজি কাঁচা পাতা থেকে তৈরি হয় এক কেজি চা। সমস্ত খরচ ধরে নিয়ে প্রতি কেজি চা বানাতে খরচ হয় ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা। অথচ খোলা বাজারে আমরা অতি সাধারন মানের চা নুন্যতম ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনি। তবে বাকি টাকা যায় কোথায়? এর সিংহ ভাগই যায় বাগান মালিকদের পকেটে। তাই বাগানের account –এ দেখা যায় loss.

এতো গেল শ্রমিকদের কথা। কর্মচারিদের অবস্থা আরো সঙ্গিন। যেহেতু তারা সঙ্খার অনুপাতে অতি নগন্য তাই এরা কোন আন্দলন ও করতে পারে না এবং মালিক পক্ষ সব সময় চায় শ্রমিক ও কর্মচারিদের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি করতে।

আমার বক্তব্য, যারা সুধিজন, যাদের সাহিত্যে, শিল্পে, কবিতায়, গানে ‘চা’ ওতপ্রত ভাবে জরিয়ে আছে। তারা এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ খুলুন। তাদের সাহিত্যে, শিল্পে, কবিতায়, গানের মাধ্যমে চা শিল্পের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। যে ভাবে অতিতে ‘নীল কর” দের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল তখনকার সুধিজনেরা।

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০১০

কোহিনুর কি ফেরত আসবে?

কোহিনুর হিরে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। ভারতের এই দাবি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সৌজন্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেবার পার্টির সাংসদ কিথ ভাজ। তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে ভারতের সঙ্গে এই ইশুতে কথা বলার অনুরোধ জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে ভারত সফরে আসছেন ক্যামেরন। এশীয় বংশোদ্ভূত হয়ে হাউস অফ কমনসে দীর্ঘদিনের সদস্য থাকার রেকর্ড করা কিথ ভাজ জানিয়েছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কোহিনুর নিয়ে আলোচনা করার এটাই উপযুক্ত সময়। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্প্রর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায় ব্রিটেন। কোহিনুর ফিরিয়ে দিলে ক্যামেরন শুধু প্রত্যেক ভারতবাসীর মন জয় করবেন তাই নয়, ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কেরও নয়া দিগন্ত শুরু হবে। ব্রিটেনের নতুন জোট সরকারের গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে ভারতের সঙ্গে বিশেষ ‘সম্পর্ক’ গড়ে তোলা অন্যতম। তাই ক্যামেরনের সফরকে অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। ১৮৪৯-এ পাঞ্জাবের মহারাজ দলীপ সিংকে হারিয়ে এই অমুল্য হিরেটি হস্তগত করে ব্রিটিশ শাসক। তারপর এই ১৬১ টি বছর এই হিরে ব্রিটেনের রানির কুক্ষিগত হয়ে আছে।
(সৌজন্যেঃ উত্তরবঙ্গ সংবাদ )

শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০১০

ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যু

গত ১৮ ই জুলাই মহানন্দা অভয়ারণ্যে ট্রেনে কাটা পড়ে ফের একটি হাতির মৃত্যু হল। ঘটনাটি ঘটেছে রাত এগারোটার কাছাকাছি সময়ে। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে একটি ইঞ্জিন আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ির দিকে আসছিল। মহানন্দা অভয়ারণ্যের মধ্যে গুলমা স্টেশন থেকে  প্রায় আড়াই / তিন কিলোমিটার আগে চোকলংখোলা হাতিদের নিজস্ব করিডর। বছর  চার / পাঁচের একটি পুরূষ হাতি ওই করিডর দিয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময়ে খালি ইঞ্জিনটি তাকে ধাক্কা মারে। ইঞ্জিনের ধাক্কার তীব্রতায় হাতিটির চারটি পা-ই ভেঙে যায়, নাড়িভুঁড়ি ছড়িয়ে পড়ে লাইনের উপরেই। মাথা ফেটে গিয়ে একটি চোয়াল শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।ধাক্কা মারার পর ইঞ্জিনটি হাতির দেহাংশ প্রায় ৫০ মিটার ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। বছর চার-পাঁচ বয়সের এই হাতিটি উচ্চতায় চার ফুট ছিল। তার ছোটো ছোটো দাঁতও ছিল।

প্রসঙ্গত, গত ২০০৮ সালেও এই যায়গা থেকে ২০০ মিটার দূরে একটি হাতি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছিল। ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৭ টি হাতি, ৫/৬ টি বাইসন, ৩/৪ টি লেপার্ড সহ আরও ছোটোখাটো বণ্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে ট্রেনের ধাক্কায়।

বার বার বলা সত্যেও এই রূটের ট্রেন গুলো বনাঞ্চলে তাদের গতি না কমানোয় এই দুর্ঘটণা ঘটছে। জানিনা কবে বন্ধ হবে এই বণ্যপ্রাণী ধংশ লীলা।
Related Posts with Thumbnails
কপিরাইট © দেবাশিস গুহ, দেবপাড়া চা বাগান, বানারহাট, জলপাইগুড়ি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.