উত্তরবঙ্গের তরাইয়ের কিছু অংশ এবং ডুয়ার্সের বেশিরভাগ অংশ অরণ্য সম্পদে ভরা। সুন্দরী ডুয়ার্স উত্তরবঙ্গের অহংকার। তরাইয়ের শুকনা, ব্যাঙডুবি, খাপরাইল, শালুগাড়া, তথা মহানন্দা-বৈকুণ্ঠপুর অভয়ারণ্য ক্রমশ বৃক্ষহীন হয়ে পড়ছে। গুলমা, গুলমাখোলা, সেবক ক্রমশ তাদের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ডুয়ার্সে যেমন আছে সীমাহীন বনানী তেমনি আছে বন্যপ্রাণী, পাখি ও সরীসৃপ। এখানে যেমন আছে ঝরনা, নদী তেমন আছে অজস্র জনজাতি – ওরাঁও-সাঁওতাল, রাভা-মেচ, কোল, ভীল, গারো, মুণ্ডা, বরাইক, তামাং, ডুকপা, টোটো। এমন বিচিত্র জনভূমি ও বনভূমি অন্য কোথাও দেখা যায় না। দুঃখের বিষয়, এই বন্য পশু-পাখিদের আবাসভূমি, একশ্রেণির মানুষের লালসায় ক্রমশ গৌরব হারিয়ে ফেলছে। একসময় এখানে হায়না-নেকড়েও পাওয়া যেতো।
এখন রয়েছে মাত্র হাতি, গণ্ডার, বাইসন এবং কিছু চিতাবাঘ। হারিয়ে যাচ্ছে পাইথন, ময়ূর, ধনেশ, টিয়া, ময়না। এখানে নিত্যনতুন রিসর্ট তৈরি হচ্ছে। নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
অভয়ারণ্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল। অথচ বনবিভাগের একশ্রেণির কর্মীর সহায়তায় নির্বিচারে চলছে গাছকাটা ও পশুপাখি হত্যা। কাটা হচ্ছে মূল্যবান গাছ – শাল, সেগুন, গামারি, চিকরাশি, পানিসাজ, শিশু, শিমুল ইত্যাদি। প্রতিদিন ধরা পড়ছে বনচোর। অন্যদিকে চোরাশিকারিরা হাতির দাঁত ও গণ্ডারের খড়্গ –এর লোভে এদের হত্যা করছে। ধরছে ময়ূর, ময়না ও টিয়া। বনের মধ্যে চলছে আবার অবৈধ কড়াতকল। শুরু হয়েছে আরেক নতুন যন্ত্রনা। মাঝে মাঝেই শোনা যায় দ্রূতগামী ট্রেনের আঘাতে বন্য প্রাণীর মৃত্যু। গত ২০০৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে ১৭ টি হাতির মৃত্যু হয়েছে দ্রূতগামী ট্রেনের ধাক্কায়। বনাঞ্চলে কিছুতেই ট্রেনের গতি ন্রিয়ন্তন করা যাচ্ছে না।
আমরা কি চেষ্টা করলে অরণ্যের সেই পুরনো চেহারা ফিরিয়ে আনতে পারি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন