শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০১০

কৈফিয়ৎ


আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে “আপনি হাতি তথা বন্যপ্রাণী নিয়ে এত লেখা লেখেন আর  আপনার আবাসন থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে (মরাঘাটে) সাতটি হাতি ট্রেনে চাপা পরে মারা  গেল, যা হাতি তথা বন্যপ্রাণীদের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটে নাই। অথচ আপনি এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ।“  সত্যি আমার আবাসনের কাছেই এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেল অথচ আমি একবারের জন্যেও সেখানে গেলাম না। ইচ্ছা করেই যাই নাই। যেমন যাই নাই রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের ক্ষেত্রেও। কদিন আগেই সেখানেও ট্রেনে চাপা পড়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল।
 আমি খুব সকালেই খবরটা পেয়েছিলাম। তবে মৃত্যুর সংখ্যাটা সঠিক ছিল না। বলেছিল পাঁচ টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। খবরটা দিয়েছিল যারা, তারাই একসময় আমাকে বিদ্রুপ করতো। আমার অপরাধ, আমি এন.জে.পি থেকে আলিপুর দুয়ার পর্যন্ত রেলপথ মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজ-এ রুপান্তারের বিপক্ষে ছিলাম। প্রতিদিন হাতির অত্যাচারের শিকার হলেও তারাও কিন্তু এই মৃত্যু ভালো ভাবে নেয় নি। আমি যাই নাই কারন আমি এই নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী চাই নি, তাই টি.ভি. তেও এই দৃশ্য দেখি নি। দূর থেকে শিশু সহ সাতটি হাতির শুধু  আত্মার শান্তি কামনা করেছি।

আন্দোলনের পদ্ধতি বদল


মানুষ মানুষকে হাইজ্যাক করে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হাতীরাও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থেকে এটা আয়ত্ত করেছে। শুনতে অবাক লাগছে?  বাস্তবে এটাই ঘটে গেল মাদারিহাটের উত্তর খয়েরবাড়ি গ্রামে।
গত ২৬/১০/১০ মঙ্গলবার মাঝরাতে প্রায় ৪০ টি হাতির একটি দল এগিয়ে আসছিল উত্তর খয়েরবাড়ির মংরা খেড়িয়ার বাড়ির দিকে। হাতির আওয়াজ শুনে মংরা ও তার ছেলে মোহন চিৎকার শুরু করলে গ্রামবাসীরা পটকা ফাটাতে ফাটাতে এগিয়ে আসেন। এমন সময় ঘটনাস্থলে বনকর্মীরাও চলে আসায় হাতির দলটি জঙ্গলের দিকে ফিরে যায়। তারপর বনকর্মী ও গ্রামবাসীরা যখন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন, তখনই ঘটে গেল রোমাঞ্চকর ঘটনাটি।
হাতি দলের গোদাটি এই অপমান সহ্য করতে পারেনি। বড় এই দাঁতালটি হঠাৎ ফিরে এসে মোহনকে শুঁড়ে তুলে জঙ্গলের দিকে নিয়ে চলে যায়। মোহন ও তার বাবা মংরার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে গ্রামবাসীদের সাথে ছুটে আসেন বনকর্মীরাও। এসে দেখেন দাঁতালটি মোহনকে শুঁড়ে তুলে জঙ্গলের দিকে নিয়ে পালাচ্ছে। মাদারিহাটে এলিফ্যান্ট স্কোয়াড়ের বনকর্মীরা এরপর উপায়ন্তর না দেখে শুন্যে ৬ রাউণ্ড গুলি চালান। এতে দাঁতালটি মোহনকে তার বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে নিয়ে তিতি নদীর বাঁধের উপর শুইয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
মোহনকে ছেড়ে যাওয়ার সময় হাতিটির পেছনের পায়ের চাপায় মোহনের ডান পা ভেঙে যায়। আর শুঁড়ে তুলে নেওয়ার সময় দুটি দাঁতের চাপে ঘাড়, পিঠ ও বুকে আঘাত লাগে। পরে সে মারা যায়। আবার মোহনের মৃত্যুতে হাতিরা খুবই শোকাহত হয়ে পড়ে।
২৮ শে অক্টোবর সন্ধ্যায় বাড়ির সামনেই মোহনের শেষকৃত্য করা হয়। সে সময় হঠাৎ লক্ষ করা যায় যে দাঁতালের নেতৃত্বে একদল হাতি কিছুটা দূরে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। সারারাত হাতির দলটি মোহনের বাড়ির চারপাশ ঘিরে রাখলেও ভোরের আলো ফোটার আগেই জঙ্গলে চলে যায়।
পরের দিন অর্থাৎ শনিবার রাত ১২ টা নাগাদ ৫০ – ৬০ টি হাতির দল তার বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে। আবার সকাল ৮ টা নাগাদ দাঁতালের নেতৃত্বে দলটি ধীরে ধীরে জঙ্গলে চলে যায়। সকলেই নতমুখে ছিল। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা হল সারারাত  হাতিরা যে তার বাড়ির চারদিকে দাঁড়িয়ে ছিল তখন কোন ক্ষতি তো দূরের কথা টুঁ শব্দ পর্যন্ত করেনি।
বলতে বাধ্য হচ্ছি যে একের পর এক বন্য প্রানীর হত্যার ফলে এঁদেরও পিঠ আজ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাই নিরুপায় হয়ে এঁরা নেমে পরেছে আন্দোলনে। কখনো ট্রেন অবরোধ, কখনো রাস্তা অবরোধ আবার কখনো বা কিডন্যাপ-এ। আমাদের আরো দেখা বাকি আছে!

Related Posts with Thumbnails
কপিরাইট © দেবাশিস গুহ, দেবপাড়া চা বাগান, বানারহাট, জলপাইগুড়ি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.